অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন,দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ায় বীমা খাতও প্রসারিত হচ্ছে।
বীমা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যত বাড়বে, বীমা খাত ততই প্রসারিত হবে। বর্তমানে বীমা খাতের যেভাবে প্রসার ঘটেছে, তাতে দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নতির চিত্রই পরিলক্ষিত হয়।’
এএমএ মুহিত শুক্রবার দুপুরে সিলেটের কবি নজরুল অডিটরিয়ামে দু’দিনব্যাপি বীমা মেলা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি সম্মানিত অতিথি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ‘বীমা মেলা-২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি গকুল চাঁদ দাস অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
এরআগে সকাল ৯টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে বর্ণাঢ্য একটি র্যালি বের হয়। বিভিন্ন বীমা কোম্পানীর প্রতিনিধিবৃন্দ ও গ্রাহকগণ এতে অংশ গ্রহণ করেন।
দেশে বীমা সংক্রান্ত এটি ২য় মেলা । ২০১৬ সালে রাজধানি ঢাকায় ১ম বীমা মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি গকুল চাঁদ দাস।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বীমা এখন আমাদের বিভিন্ন উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শাখা অফিস আছে। যার সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এটা আমাদের কৃতিত্বের বিষয়, প্রগতির জন্যও ভাল একটা দিক।
তিনি বলেন, বীমার দু’টি দিক, একটি সাধারণ বীমা এবং অপরটি জীবন বীমা। দেশে উভয় ক্ষেত্রেই বীমার উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটেছে। ‘লাইফ ইনস্যুরেন্স’ এখন তৃণমুল পর্যায়েও সাড়া জাগিয়েছে।
এএমএ মুহিত উল্লেখ করেন,দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যত বাড়বে সাধারণ বীমা করার প্রবণতাও তত বাড়বে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন মৌখিক লেনদেন নেই, সব আনুষ্ঠানিক লেনদেন। যার ফলে বীমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া,সাধারণ বীমা আনুষ্ঠানিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রোধ করে দেয়।
তিনি সিলেটকে বীমা খাতের দিশারী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘শুধু এখন নয়, পাকিস্তান আমল থেকে সিলেটিরা এই ভূমিকা পালন করে আসছে।
চলমান বীমা মেলায় মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ হবে এ আশা ব্যক্ত করে এএমএ মুহিত সিলেটে দেশের দ্বিতীয় বীমা মেলা আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
এ অনুষ্ঠানে বক্তারা বীমা সেক্টরকে গতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করে বীমা খাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
উদ্বোধন শেষে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন বীমা কোম্পানির বীমা দাবির চেক গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করেন। প্রায় ৬ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।
দু’দিনের মেলায় সর্বমোট ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
উদ্বোধন শেষে আবুল মাল আব্দুল মুহিত রিকাবীবাজারস্থ জেলা স্টেডিয়ামের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
দেশের দু’টি সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশন এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ছাড়াও ৩০টি বেসরকারি বীমা কোম্পানীর স্টল রয়েছে এ মেলায়। এরমধ্যে ১৬টি লাইফ ইনস্যুরেন্স ও ১৪টি নন-লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী রয়েছে। আগামীকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের সুবিধার্থে ১৯৭২ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশের সকল বীমা কোম্পানি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকার বীমা শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১০ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়ন করে এবং ২০১১ সালে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতোমধ্যে বীমা আইন-২০১০ প্রণয়ন এবং ‘জাতীয় বীমা নীতি-২০১৪’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বর্তমানে দু’টি সরকারি কর্পোরেশনসহ মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানি দেশের জনসাধারণের জীবন ও সম্পত্তির আর্থিক নিরাপত্তায় সেবা প্রদান করছে।